ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫ , ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লোহার খাঁচায় তিন সন্তান নিয়ে পথে নেমেছেন জান্নাত!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০২:৫৩:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০২:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন
লোহার খাঁচায় তিন সন্তান নিয়ে পথে নেমেছেন জান্নাত! ​ছবি: সংগৃহীত
লোহার তৈরি খাঁচা, উপরে ছাউনি, খাঁচার সঙ্গে চাকা লাগিয়ে নেওয়া গাড়িতে যমজ ৩ শিশুসন্তানকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এক অসহায় মা। তাঁর সঙ্গে হাঁটছে আরেকটি শিশু। বয়স ৩ বছর ৬ মাস।  চার সন্তানের মা জান্নাত বেগমের সঙ্গে কথা হয় ঠাকুরগাঁও সদরে। মলিন পোশাক, চেহারায় বিষণ্নতা, দু’চোখে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে। ১৩ মাস বয়সী ৩ যমজ শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়েশা। তাদের চেয়ে ৬ মাসের বড় মরিয়ম। অবুঝ চার সন্তানকে নিয়ে জীবনের অথৈ সাগর পাড়ি দিচ্ছেন জান্নাত বেগম। 

তিনি জানান, বছর পাঁচেক আগে ঢাকায় তার বিয়ে হয় হাবিলের সঙ্গে। প্রেমের বিয়ে। বিয়ের পর ঠাকুরগাঁও চলে আসেন স্বামীর সঙ্গে। তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। শুরুর কিছুদিন সংসার ভালোই চলছিল। প্রথমে এক কন্যা সন্তানের পর যমজ ৩ সন্তানের মা হন জান্নাত বেগম। এরপরই তার জীবনে নেমে আসে দোজখ। সন্তান, স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান হাবিল। এরপর থেকেই চার শিশুসন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন এই অসহায় মা। যেভাবেই হোক, সন্তানদের জন্য তিনি অনেক ভেবে বেঁচে থাকার একটা উপায় বের করেন। তিনি চলে যান কামারের দোকানে। তাদের বলে দুটি চাকা লাগানো একটি লোহার খাচা বানিয়ে নেন। সেই খাচার ভেতর ৩ শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে।   

জান্নাত বেগম বলেন, ‘‘তিন পোলা-মাইয়া নিয়া তো আর হাঁটা যায় না। তাই গাড়ি বানাইছি। বিভিন্ন সময় অনেকেই সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিছে। আমি রাজি হই নাই।’’ সন্তানের প্রতি মায়ার কাছে হার মেনেছে টাকার লোভ। তারপরও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি জান্নাত বেগম। তিনি বলেন, ‘‘আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আপমানের, লজ্জার। কিন্তু এ ছাড়া আমার তো কোনো উপায় নাই। বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পাইছি। কিন্তু ছোটো ছোটো বাচ্চা, কার কাছে রেখে যাব?’’

৭ হাজার টাকা খরচ করে খাঁচাসহ গাড়ি বানিয়েছেন জান্নাত বেগম। সন্তানদের এই খাঁচায় নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তোলেন। যদিও খুব বেশি সহযোগিতা তিনি পান না। ‘ঘুরে বেশি পরিমাণে টাকা পাই না। সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারও কিনে দিতে পারি না। অনেক সময় তো পেট ভরে খাবারও দিতে পারি না,’’ বলেন জান্নাত বেগম। 

রোকসানা পারভীন। জান্নাতের প্রতিবেশী। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনো নারীর পক্ষে এত ছোটো ছোটো ৪টি বাচ্চা লালন-পালন করা কষ্টকর। সেখানে তাকে লালন-পালনের পাশাপাশি উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। জান্নাতকে দেখলেই বোঝা যায় একটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে।’’

আরেক প্রতিবেশী শারমিন হাসান বলেন, ‘‘অনেক সময় তার বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনলে খারাপই লাগে। এত ছোটো ছোটো বাচ্চা! বিত্তশালীরা কত কত জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতা করে, কিন্তু জান্নাতকে সাহায্য করতে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।’’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা জানা ছিল না। আমি দ্রুত খোঁজখবর নেব। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়াবে।’’
 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ